ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

মহেশখালী ভূমি অফিসে বেপরোয়া দালাল চক্র

ovijogমহেশখালী প্রতিনিধি ::::

কক্সবাজর জেলার ভাগ্যের চাকা কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পকে কেন্দ্র করে মহেশখালীর মাতারবাড়িতে জায়গা জমির দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। যার কারণে ভূয়া খতিয়ান সৃজনও বেড়েই চলছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে স্থানীয় ভুক্তভোগিদের মাঝে ব্যাপক তোলপাট সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।  সৃজিত ভুয়া খতিয়ান ও বিশ্বস্ত সুত্রে জানাগেছে, দীর্ঘদিন ধরে মাতারবাড়ির চিহ্নিত দালাল আব্দুল সাত্তার, মৌলভী খলিল, টিপু সুলতান ও নসরুত উল্লাহ সংঘবদ্ধ হয়ে মহেশখালী ভূমি অফিসের একটি চক্র টাকার লোভে পড়ে ভূয়া খতিয়ান সৃজন করে আসছে। ২০১২ সালের শেষের দিকে মহেশখালীর সাবেক ইউএনও এটিএম কাউসার হোসেন সহকারি কমিশনার (ভুমি) হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকালে দালাল চক্র এ ঘটনা ঘটায়। ওই সময় সাবেক ইউএনও কাউসার হোসেন এবং কানুনগো শাহ নেওয়াজ কুতুবীর স্বাক্ষর জালিয়াতি করে মাতারবাড়ি মৌজা’র ৫০৬৮/১ এবং ৪০৯৫/১ নামে ২টি খতিয়ান সৃজন করে ভুমি অফিস কেন্দ্রিক একটি প্রতারক চক্র। সৃজিত খতিয়ানের মধ্যে ৪০৯৫/১ তে ৮ দশমিক শুন্য ৪ একর জমিতে ২৪ জনের নাম এবং ৫০৬৮/১ তে ১০ দশমিক শুন্য ৫ একর জমিতে ৯ জনের নাম অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে।  উল্লেখ যে, সাবেক ইউএনও এটিএম কাউসার হোসেন কর্মস্থল থেকে বদলীর সুবাদে প্রতারক চক্রটি সু-কৌশলে গত ২০১৬ সালের মে মাসে স্বাক্ষর জালিয়াতির পাশাপাশি ভুয়া তারিখের আদেশ দেখিয়ে বির্তকিত ওই খতিয়ান ২টি সৃজন করে।  সুত্র প্রকাশ, জেলার ১ নম্বার খাস খতিয়ান থেকে আগত বলিউম দেখিয়ে মহেশখালী ভূমি অফিসের কানুনগো শাহ নেওয়াজ’র সহকারি জাফর, অফিস সহকারি মৃদুলের সহকারি নয়ন ও মাতারবাড়ি তহশীলদার অফিসের সহকারি মো. আলম বহাল তবিয়তে দালালদের সাথে আতাঁত করে মোটা অংকের বিনিময়ে বির্তকিত খতিয়ান সৃজন করে তোলপাড় সৃষ্টি করে। পরে ভুক্তভোগিরা বিষয়টি সর্ম্পকে অবগত হয়ে আইন-আদালতে আশ্রয় নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এনিয়ে দালাল চক্রের মাধ্যমে ভুয়া খতিয়ান সৃজন করে লাখ লাখ টাকার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এবিষয়ে মহেশখালী উপজেলা ভুমি অফিসের কানুনগো শাহ্ নওয়াজ কুতুবী জানায়, মাতারবাড়ি মৌজা’র ৫০৬৮/১ এবং ৪০৯৫/১ খতিয়ানের কোনো নথিপত্র নেই। খতিয়ানে ২টি স্বাক্ষর রয়েছে তার মধ্যে একটি আমার নামে স্বাক্ষর রয়েছে। কিন্তু ওই স্বাক্ষর আমার না, জালিয়াতি করা হয়েছে। কে বা কারা বলিউমে এ খতিয়ান অন্তর্ভুক্ত করেছে তা জানা নেই। যে দাগ থেকে খতিয়ান সৃজন করা হয়েছে ওইটাতে কোনো ধরণের নোট দেয়া হয়নি। কি মুলে খতিয়ানগুলো হয়েছে তার কোনো মামলার নথিপত্র অফিসে নেই। সম্প্রতি উল্লিখত খতিয়ান ২টি বলিউম থেকে বাতিল করা হয়েছে। তবে তার একান্ত সহকারি জাফর ওই জালিয়াতি চক্রের সাথে জড়িত রয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জড়িত থাকতে পারে, এবং একাধিক স্থানীয় সুত্র তা নিশ্চিত করেছেন। মাতারবাড়ি ইউনিয়ন ভুমি অফিসের তহশীলদার মোহাম্মদ ফিরোজ’র কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, মাতারবাড়ি মৌজা’র ৫০৬৮/১ এবং ৪০৯৫/১ খতিয়ান ২টিতে গরমিল থাকার কারনে দাখিলা দেয়া হয়নি।  তবে ওই তহশীলদার এর বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের পাশাপাশি কর্মস্থলে উপস্থিতি নিয়েও উপকারভোগিদের মাঝে ক্ষিপ্ত পরিবেশ উপলক্ষিত হয়েছে। এবিষয়ে উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভুমি) মহেশখালী বিভীষন কান্তি দাশ জানান, মাতারবাড়ি মৌজা’র ৫০৬৮/১ এবং ৪০৯৫/১ খতিয়ানের কোনো নথিপত্র নেই। ১ নম্বার খাস খতিয়ান থেকে আগত ওই দাগের কোনো নোটও নেই। আমি যোগদান করার আগে কেউ ওই খতিয়ানের কপিটি যাচাই-বাচাই না করে বলিউমে অর্ন্তভুক্ত করেছিল। তবে এই নিয়ে কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল কালাম জানান, ভূয়া খতিয়ান কারা সৃজন করে তা খতিয়ে দেখা উচিত। জানামতে খাস জমি থেকে খতিয়ান সৃজন করতে হলে ডিসি মহোদয় থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হয়। তিনি এ বিষয়ে উপজেলা ভুমি অফিস সংশ্লিষ্টদের সর্তক থাকার আহবান জানান।  তবে একটি সুত্র জানিয়েছেন, মহেশখালী ভুমি অফিসের কানুনগো শাহ্ নওয়াজ কুতুবী, তহশীলদার ফিরোজ ও সহকারি মৃদুল এর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ওই দালাল চক্র বেপরোয়া হয়ে এ বির্তকিত কাজক্রম চালিয়ে আসছে। মহেশখালী ভুমি অফিসে অনিয়ম-দুর্নীতির শীর্ষ এবং দীর্ঘ দিন বহাল তবিয়তে থাকা, কানুনগো শাহ নেওয়াজ কুতুবী। বির্তকিত এ কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মহেশখালী উপজেলা প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগিরা।

পাঠকের মতামত: